প্রিন্স আশরাফ
—————
অধ্যায় ১
—————
এগারোটার আগে যে করে হোক পৌছতেই হবে।
রাত্রির শেষ বাস থেকে নেমে দ্রুত পা চালায় নাভিদ হোসেন। এখনও হাতে কয়েক মিনিট সময় আছে। লম্বা লম্বা পা ফেলে যেতে পারলে হয়তো শেষ রক্ষা হবে। আর না হলে রাতটা বাইরের কোন মেসে টেসেই কাটাতে হবে।
গতদিন রাতে ঠিক এগারোটার সময় গ্রীলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। নাভিদ দেখেছিল তাদের বাড়িওয়ালা সেকান্দর পাঠান, অবসর প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ভারিক্কী চালে নিজেই গ্রীলের তালা লাগাতে এসেছেন। এই কর্মটি উনি করেন এবং এই তালার চাবি কখনও কোন ভাড়াটেকে দেয়া হয় না।
মেজর (অবঃ) নাভিদকে দেখে গেট খুলে একপাশে সরে দাঁড়িয়েছিলেন এবং গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলেন ‘যেখানেই থাক এগারোটার মধ্যেই চলে আসবে। আমার কাছে কিন্তু এগারোটা মানে এগারোটাই। বারোটা নয়। এক মিনিটও এদিক ওদিক হবে না।’ তিনি টান টান হয়ে আর্মির ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন ‘জীবনে কখনও সময়ের হেরফের হয়নি। শেষবেলায় এসেও হতে দেব না।’
লোহার গ্রীলের বাইরে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখল নাভিদ। এখনও এক মিনিট সময় হাতে আছে। গ্রীলের ওপাশের দেয়ালে সারিবদ্ধ কলিংবেলের সুইচ। প্রতিটির পাশে ডট পেন দিয়ে নাম লেখা। দোতলার জায়গায় তিনটি নাম। রিয়াজ, শিহাব, সুমন। মেস তো। দোতলারটায় চাপ দেয় সে। দেরী দেখে তার বন্ধু সুমন উৎকণ্ঠিত হয়ে আছে। কলিংবেল শুনলে ছুটে আসবে।
নাভিদ নিজে বাসা ভাড়া করে থাকলে এই সুরক্ষিত দুর্গের বাসায় থাকত না। তার টাকা থাকলে কখনও সে এমন একটা বাসায় ভাড়া নিত না। যেখানে এগারোটা মানে এগারোটাই। বারোটা নয়। কিন্তু তার ব্যাচেলর বন্ধু সুমন এখানে আরও কয়েকজন চাকরিজীবী বন্ধুর সাথে মেস করে থাকে। সে নিজে কোন নির্দিষ্ট কাজ করে না বলে এত টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সুমনের সাথে ডাবলিং করছে সে। ব্যাচেলরদের সাথে ব্যাচেলরদের বন্ধুত্ব অটুঁট থাকে। বিবাহিত বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বিয়ের পরে কেমন যেন পানসে হয়ে যায়।
দোতলা থেকে ধুপধাপ মার্চ করার তালে কারও নেমে আসার শব্দ শোনা যেতে থাকে। মনে হয় অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ভারী তালা হাতে বেরিয়ে পড়েছেন তার রাতের শেষকর্মটি করার জন্য।
ঠিক এমনি সময় নাভিদের পেছনে রাস্তার পাশ ঘেষে পুলিশের কভার্ড ভ্যান এসে থামে।
নাভিদ পিছন ফিরে ব্যাপারটা কি দেখতে চাইতেই দুজন কনস্টেবল গাড়ি থেকে নেমে এসে মানবের দুপাশে রাস্তার দুদিক বন্ধ করে দাঁড়ায়।
তারপর অপেক্ষাকৃত স্মার্ট, কমবয়সী, মুখে ব্রণের দাগ কনস্টেবলটি রুটিন গলায় বলে ওঠে ‘আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।’
রাত এগারোটা বেশি রাত নয়। আশেপাশের দুএকজন কৌতুহলী পথচারী, সম্ভবত এই গলিতেই বাসা, দাঁড়িয়ে ব্যাপার কি দেখতে থাকে। ততক্ষণে সুমন নেমে এসে লোহার গ্রীলের ভেতর থেকে আটকানো ছিটকিনি খুলতে শুরু করেছে। সামরিক কর্মকর্তা পুলিশ দেখে ওখানেই দাঁড়িয়ে গেছেন, আর এগোননি। এসব পুলিশরা পাজির পা ঝাড়া, এরা সামরিক টামরিক কিছুই মানে না।
দ্রুত চিন্তা করতে থাকে নাভিদ। এর মধ্যে সে এমন কি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে আছে যার সাথে পুলিশের সম্পর্ক থাকতে পারে। নাহ, তেমন কিছুই তো মনে পড়ছে না। নারী, নেশা, অর্থ কোনটা নিয়েই তো তার কোন ঝামেলা নেই। সে নির্বিরোধী মানুষ, তবে ঢোঁড়া সাপ নয়। বিষ আছে। কিন্তু সে তো কোথাও বিষ উগলায় নি। বাসের কন্ট্রাকটরের সাথে বাড়তি ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি ছাড়া তেমন কিছুই তো হয়নি। তার জন্য যদি পুলিশ আসে তাহলে বুঝতে হবে পুলিশ বাহিনীর সত্যিই দুর্দিন চলছে।
নাভিদ শান্ত গলায় স্মার্ট পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল ‘দেখুন, আমার মনে হয় আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।’ তার কন্ঠস্বরের উদ্বিগ্নতা চাপার চেষ্টা, ‘আপনি যাকে খুঁজতে এসেছেন হয়তো আমি সে নই।’
র্স্মাট পুলিশটি ততোধিক শান্ত কন্ঠে বলল ‘ভুল হয়ে হয়ে পুলিশের একটা বদনাম হয়ে গেছে সত্যি। তবে এক্ষেত্রে যে ভুল হচ্ছে না সে ব্যাপারে আমি আপনাকে সেন্ট পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিতে পারি।’
‘কারণটা জানতে পারি কি?’
‘কারণটা গোপনীয়। থানায় গেলেই জানতে পারবেন।’
সুমন গেট থেকে বের হয়নি। পুলিশ জিনিসটা তার সবিশেষ পছন্দ নয়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে তার নতুন চাকরি। পুলিশের ঝামেলা আছে জানতে পারলে ছুটে যেতে পারে।
সুমন গেটের কাছে এসে ফিচলে হাসি হেসে ফিসফিস করে বলল ‘তুই যে মেজর। সেটা ওদেরকে বলেছিস। তোর পরিচয় দে।’
‘ঠাট্টা রাখ। আমি ওদের সাথে যেয়ে দেখে আসি ব্যাপারটা কি?’
‘আরে ওদের সাথে যাবি কি? ওই হাংলা পাতলা দুই কনস্টেবলকে তোর হাতুড়ির মত হাতে ধাম ধাম করে দুই ঘুষি দিয়ে চিৎপটাং করে ফেলে দে। তারপর ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করে ঘুমা।’
‘উঁহু। ওসব করা যাবে না। তাতে ঝামেলা আরো বাড়বে। আমার বন্ধু হিসাবে তোরও ঝামেলা হবে। যাই। মনে হয় না কিছু হবে। কিছুই তো করিনি আমি।’
সুমন হেসে বলল ‘কিছু না করার অপরাধেই হয়তো তোকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। সবাই যেখানে পুলিশকে হয়রানির মত কিছু না কিছু করছে, সেখানে তোর এই দশাসই শরীর নিয়ে তুই কেন কিছু করিসনি, এটাই হয়তো তোর অপরাধ।’
নাভিদ হেসে ফেলল। তারপর সামরিক কর্মকর্তা বাড়িওয়ালার দিকে তাকিয়ে ক্লোজআপ মার্কা হাসি দিয়ে লাফিয়ে উঠল পুলিশের গাড়িতে।
পুলিশের কভ্যার্ড ভ্যান কিন্তু থানার দিকে চলল না। নাভিদ থানা চেনে। থানার সামনে দিয়ে তার অনেক বার যেতে আসতে হয়। যদিও কখনও ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন পড়েনি।
কভ্যার্ড ভ্যান রাজপথ ধরে ছুটতে লাগল। শুক্রাবাদ থেকে বেরিয়ে প্রথমে ধানমন্ডি, তারপর রাইফেল স্কয়ারের সামনে দিয়ে সাইন্স ল্যাব হয়ে নিউমার্কেট। নাভিদ তখনও বুঝতে পারছে না এরা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য চোখে কালো কাপড় বেঁধে র্যাবের মত ভয়ংকর ভাবে নিচ্ছে না এটাই হাজার শোকর।
এরপর নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাহলে বোধহয় শাহবাগের পাশে রমনা থানায় নেবে। কিন্তু এরা তো সেদিকেও যাচ্ছে না। আবার ঘুরে পলাশীর প্রান্তরে। জিজ্ঞেস করে দেখবে নাকি ব্যাপারটা কি? থাক, দেখাই যাক না কোথায় গিয়ে ঠেকে।
এবারে মেডিকেল, চাংখার পুল হয়ে গাড়ি যেতে থাকে নগর ভবনের দিকে। ব্যাপার কি? এরা কি তাকে নিয়ে হাওয়া খেতে বের হয়েছে নাকি? এদিকে আবার কোন থানা? তার এরিয়ার থানা তো এটা না?
গুলিস্থানের পুলিশ বক্সের কাছে অন্য একটি দাঁড় করানো জীপের পাশে এসে গাড়িটি দাঁড়ায়।
ভেতরে বসা কনস্টেবলটি খুব নরোম স্বরে তাকে নামতে বলে।
স্মার্ট কনস্টেবলটি সামনে দাড়ানো জীপের দরজার দিকে তাকিয়ে সেলুট করে সরে দাঁড়ায়।
নাভিদ নিচে নেমে হাত পা ছুঁড়ে আড়মোড়া ভেঙে দাঁড়াতেই জীপের থেকে পালিশ করা পুলিশী কণ্ঠ হাওয়ায় ভেসে আসে ‘হ্যালো মেজর, ঘাবড়ে দিয়েছি নাকি?’
নাভিদ ঘাবড়ায় না। মেজর শুনেই সে বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা কি ঘটেছে, যদিও এর আগেই সে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে কিছুটা অনুমান করে নিয়েছিল। কিন্তু এই নাটকীয়তা বুঝতে পারছিল না। ‘মেজর’ নামটা তার বন্ধুদের দেয়া এবং এই নাম শুধু তারাই জানে।
পুলিশ অফিসার জিপ থেকে নেমে এসে তাকে ঈদের কোলাকুলির মত জড়িয়ে ধরে ‘তুই যে ঘাবড়াসনি তা তোর মুখ দেখে বুঝতে পারছি। তোকে কি সত্যি কেউ ঘাবড়ে দিতে পারে না?’ আমুদে কন্ঠে বলে, ‘তুই কি সব কিছুই বুঝে নিতে পারিস?’
নাভিদ পুলিশের পোশাক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে ‘মাঝরাতে খিদে পেটে এই নাটক ভালাগছে নারে গাধা।’ নিজের পেটে হাতের চাপড় মেরে বলে ‘আজ টিউশনিতে শুধু চা আর বিস্কিট দিয়েছে। বোঝ ট্যালা।’ তার কণ্ঠস্বরে আমুদে ভাব, ‘তারপরে এই ঠান্ডা হাওয়ায় সারা ঢাকা শহর ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছিস। হাওয়া খেলে বোধ হয় খিদে বেড়ে যায়।’ আতঙ্কের পর বন্ধুকে পেলে যেমনটি হয়।
পুলিশ অফিসার, নেম প্লেটে লেখা রকিবুল হাসান, হো হো করে হেসে ওঠে।
তারপর নাভিদের পিঠে আন্তরিক ভঙ্গিতে হাত রাখে ‘তোর খিদে মেটানোর ব্যবস্থা করছি দোস্ত।’ রকিবুল হাসান হাসে ‘তাছাড়া একসাথে খাব বলে আমিও খাইনি। খিদে আমারও পেয়েছে। তার আগে বল, আমিই যে এই নাটক করছি তুই বুঝে ফেললি কি করে?’
‘বুদ্ধি খাটিয়ে।’ নাভিদ পিঠ থেকে পুলিশী কর্কশ হাত সরিয়ে দেয়, ‘তোদের পুলিশের মত তো আমি মগজ অকেজো রেখে শুধু মাংসপেশি ব্যবহার করি না। মগজ খাটাই। এবং প্রয়োজনে মাংসপেশীও।’
‘নিয়মিত ব্যায়াম করার সেই বদভ্যসটা তোর আছে এখনও?’ রকিবুল হাসান নিজেও দুই হাত দুদিকে ছুড়ে দেয় ব্যায়ামের ভঙ্গিতে।
‘শুধু ব্যায়াম না। সকালে উঠে এখনও প্রত্যেকদিন দুই মাইল টেস্ট দিয়ে আসি।
‘ভাল, খুব ভাল।’ রকিবুল হাসান স্ট্রেচিং চালিয়ে যায়, ‘শরীর ঠিক তো সব ঠিক। আমার তো তাগিদে পড়ে ব্যায়াম করতে হয়। তারপরও ভুঁড়ি বেড়ে যাচ্ছে।’ সে পরম মমতায় তার চালকুমড়োর মত বাড়তে থাকা ভুঁড়িতে হাত বুলায়, ‘তোকে দেখলে ঈর্ষা হয়। কি সুন্দর মেদহীন ঝরঝরে শরীর।’
স্ট্রেচিং শেষে রকিবুল হাসান জিপের পাশে দাড়ানো কনস্টেবলকে হাত ইশারা করে কি বুঝিয়ে দিয়ে হাটতে উদ্যৎ হয়। তার নজর তখনও তার বেড়ে যাওয়া ভুঁড়ির দিকে।
অগত্য নাভিদও রকিবের পিছু নেয়।
রকিবের পাশে কিছুদর হাটতে হাটতে নাভিদ জিজ্ঞেস করে ‘কোন দিকে যাচ্ছি বলতো?’
‘এখানে কাছেই খুব ভাল একটা খাওয়ার হোটেল আছে।’ রকিব দাড়িয়ে পড়ে, নাভিদের দিকে তাকায়, আবার হাটে ‘হোটেলটাতে আমি আগের থেকে বলে রেখেছি। পুলিশ তো স্পেশাল খাতির করে। তার ফায়দা ওঠাই।’
নাভিদ অবাক গলায় বলল ‘তুই পুলিশী ফায়দা ওঠাচ্ছিস? আশ্চর্য!’
‘শোন, আমি কোনদিন নীতিবানটান ছিলাম না, সে তুই ভাল করেই জানিস। স্কুলে কলেজে থাকতেই তো দেখেছিস। আমি সবসময় মিডিওকার। আর পুলিশে ঢুকেছি তো ফায়দা ওঠাতেই। দোস, ওই প্রসঙ্গ বাদ দে। ফায়দা তো ওঠাই। আবার সেটা নিয়ে কচকচানি শুনতে ভালাগে না। নিজেকে তখন অধমের চেয়ে মনে হয়। বাদ দে, আমিই যে পুলিশ পাঠিয়েছি সেটা বুঝে ফেললি কি করে বললি না কিন্তু।’
‘বলার সময় দিলি কই।’ নাভিদ রকিবের গা ঘেষে হাটতে থাকে, ‘এক্কেবারে প্রথমে বুঝতে পারিনি। পুলিশে ধরেছে ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। পুলিশী ভ্যানে ঢাকা শহর চক্কর দিচ্ছি। আর আমি ছাড়া পাওয়ার উপায় হিসাবে পুলিশে পরিচিত কে আছে সেটা ভাবতে লাগলাম। তখনই তোর কথা মনে পড়ল। তুই সাভার থানা থেকে ঢাকায় বদলী হয়েছিস সেটা জানতাম। কিন্তু কোন থানায় সেটা জানতাম না। আমাদের থানায় তোর পোস্টিং হয়নি সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। তাহলে তুই অবশ্যই এসে খোঁজ নিতিস। তখনই ভাবলাম ব্যাপারটা এমন হলে কেমন হয় যে, হয়তো তুইই পুলিশ পাঠিয়েছিস আমাকে ধরে আনার নাটক করে নিয়ে আসতে। তোর সাথে দেখা না করার অপরাধে। পুরো ব্যাপারটা ওভাবে ভাবতেই সবকিছু দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গেল। সন্ত্রাসী বা অপরাধী ধরতে মাত্র দুজন কনস্টেবল আসে না। আর এলেও তারা ওরকম শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে কথা বলে না। বিশেষত আমার মত শক্তিশালী একজনকে ধরতে। কনস্টেবল দুজনের মধ্যে উত্তেজনার কোন চিহ্ন দেখতে পেলাম না। যেন কোন বন্ধুকে ডেকে নিতে এসেছে সেরকমই ভাব। অস্ত্রও ধরা আছে হেলাফেলার ভঙ্গিতে। ট্রিগারে আঙ্গুল নেই। কোন এ্যালার্টনেস নেই। আমাকে প্রটেকশনের কোন ব্যবস্থা নেই। সব ঢিলেঢালা। বুঝতে বাকি রইল না। তুই পাঠিয়েছিস। গাড়িতে ওঠার সময় একজন আরেকজনকে মন্তব্য করার ভঙ্গিতে বলতে শুনলাম ‘স্যার যে কি পাগলামী করে না এই রাত দুপুরে? বুঝলাম স্যার তুই, আর পাগলামীটা আমাকে ধরে নেয়ার নাটক। কোন সন্ত্রাসী ধরাকে পুলিশ পাগলামী বলে না। গাড়িতেও ওরা আমাকে যেভাবে রাখল তাতে যেকোন সন্ত্রাসী লাফিয়ে পড়ে ঝেড়ে দৌঁড় দিলে ওদের আঙুল চোষা ছাড়া কিছু করার থাকত না।’
হোটেলের কাছাকাছি আসতে আসতে রকিব বলল ‘তোর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আগের মতই আছে দেখছি।’ হোটেলের দিকে তাকায়, ‘ নিয়মিত চর্চা করিস নাকি?’
নাভিদও রকিবের দেখাদেখি হোটেলের দিকে তাকায়। নিয়ম আলোয় দেখা যাচ্ছে হোটেলের সাইনবোর্ড-
বিসমিলাহ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
প্রঃ জামাল মোলা
এখানে মাছ ভাতের সুবন্দোবস্ত আছে।
মাছ ভাতের কথা লেখা থাকলেও দুপাশে ঝুঁটি তোলা মোরগ এবং বিশাল সাইজের খাসির ছবি।
‘দূর, এগুলো আবার চর্চা করা লাগে নাকি?’ নাভিদ হোটেলের ভেতর চোখ দিয়ে বলে, ‘ সবাই যে জিনিস মোটামুটি ভাবে দেখে আমি সে জিনিস খুঁিটয়ে খুঁটিয়ে খুঁিটনাটি দেখি। তারপর দুইয়ের সাথে দুই মিলিয়ে চার বানানোর চেষ্টা করি। তুই কি বলতে পারবি যে পঞ্চাশ টাকার নোটের পিঠে কোন মসজিদের ছবি আছে? পারবি না? অথচ তুই একটু আগেই একটা পঞ্চাশ টাকার নোট দিলি কোক আনানোর জন্য। কারণ তুই টাকাটা হাতে নিয়েছিস অসংখ্যবার অথচ কখনও খুঁটিয়ে দেখিসনি। ওটা যে পঞ্চাশ টাকার নোট এটাই জেনেছিস এবং ব্যস এটুুকুতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু আমি আরেকটু বেশি দেখার চেষ্টা করি। এই যেমন তোর ব্যাপারে।’
‘আমার আবার কি ব্যাপার?
‘এই যে রুমি ভাবীর কথা, তুলতুলিকে নিয়ে তোর সাথে রাগারাগি করে বিকালে বাপের বাড়িতে চলে গেছে। এবং আরেকটু ভিতরের খবর বলতে গেলে বলতে হয় যে তোর ওই ফায়দা ওঠানোর ব্যাপারটা নিয়েই রাগারাগির সুত্রপাত। ভাবী ওটা পছন্দ করে না, না?’