Saturday, May 24, 2025
Homeধারাবাহিক উপন্যাসছিদ্রবিহীন ড্রাম খুঁজছি

ছিদ্রবিহীন ড্রাম খুঁজছি

মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী

——————
১ম কিস্তি
——————
‘বউ ধার দিব, নিবেন দাদা?’ ল্যাপটপের স্ক্রিণে চোখ রেখেই বললাম রণজিৎকে।
‘আমি যে আপনার ডেস্কে ঢুকলাম, আমার দিকে তো তাকালেনই না। কেমনে বুঝে ফেললেন, আমিই রণজিৎ?’ আমার ডেস্কের সামনের চেয়ার টেনে বসতে বসতে জানতে চাইলেন রণজিৎ।
আমি আসলে রণজিৎের জুতার শব্দে বুঝে যাই এটা রণজিৎ। আর একজনের পায়ের শব্দ আমি বুঝতে পাই। সে হলো রফিক। রফিক হলো আমাদের অফিসের অফিস এসিসট্যান্ট কাম কিøনার। রণজিৎকে আমি যদি বলি আপনার জুতার শব্দে আমি টের পাই। এ কথা শোনার সাথে সাথে রণজিৎ অতি উৎসাহী হয়ে যাবেন। সেই সাথে মাথার মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্নের উদয় হবে। যেমন রণজিৎ জানতে চাইবে, ভাই, আমার হাঁটার ধরণ কি ভালো না? ভাই, আমার জুতার শব্দ কি খুব বেশি হয়? ভাই, আমি কি খুব দ্রæত হাঁটি? এরকম নানা রকম প্রশ্ন করে ফেলবে। এসব প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাকে বললাম, ‘অনুমান করে বলেছিলাম। অনুমান সঠিক হয়েছে। আপনি কথা বলে তা নিশ্চিত করলেন।’
‘মানে?’
‘মানে আপনার কন্ঠ শুনে নিশ্চিত হলাম আর কি।’
‘ও আচ্ছা। আর কী যেন বলছিলেন?
‘বলছিলাম, বউ ধার দিব। নিবেন?’
‘বউ!’
‘হুম।’
‘কেন ভাই, আবার বিয়ে করবেন নাকি?’
‘না।’
‘ভাই, ভাবীর কি বড় ধরনের কোনো অসুখ আছে?’
‘না।’
‘তাহলে আপনি কেন বউ ধার দিবেন। নিশ্চয় আপনি আর একটা বিয়ে করার চিন্তা করছেন। ভাই, ভাবীকে কিন্তু আমি বলে দিব।’
‘ আবার বিয়ে? কখনো না।’
‘বুঝেছি, তাহলে আপনার পাখা গজিয়েছে। সেই পাখা দিয়ে উড়াল দিবেন।’ ভুরু নাচিয়ে বলেন রনজিৎ।
‘পাখা গজালে তো পরিদের দেশে যেতাম। আপনাকেও সাথে নিয়ে যেতাম।’
‘আমি কেন উড়তে যাব আপনার সাথে। আমার আর কাজ নাই।’
‘না কাজ আপনার আছে। আপনি কাজের লোক। সারাদিন কাজ নিয়ে থাকেন। সবাই আপনাকে সেকারণে পছন্দও করে। কাজ আপনার নাই সেটা আমার বলা উচিৎ হবে না। যেটা বলা উচিৎ হবে সেটাই আপনাকে বলি। আপনার কাজ আছে, কিন্তু বউ তো নাই।’
‘ধূর ভাই! কোন লাইনে গেলেন।’
‘ আরে ঠিক লাইনেই আছি। আমি আপনাকে সাথে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে পরিদের কাছে ফেলে দেব। তখন আর আপনার বউয়ের প্রয়োজন হবে না।’
‘রসিকতা বাদ দেন ভাই। কাজের কথায় আসি। বিকেলে নাকি আপনারা কেক কাটার আয়োজন করেছেন।’
‘ কেক! কার?’
‘আবারো রসিকতার মধ্যেই থাকলেন?’
‘কার কেক কাটা হবে বলেন তো?’ আবার প্রশ্ন করলাম রণজিৎকে। বিষয়টা আমি জানি। ইচ্ছে করে প্যাচাচ্ছি। কোনো কোনো প্যাচে মজা আছে। এটা মজার প্যাচ।
‘আপনি জানেন না বুঝি?’
‘মনে করতে পারছি না তো।’
‘ভাই, আজ কিন্তু ১২মে।’
‘হুম, ১২ মে। তো?’
রণজিৎ বেচারা আমার এই প্রশ্নে মনে হয় কিছুটা লজ্জিত হলেন। নিজের জন্মদিনের কথা কলিগ মনে রাখছে না। এটা হয়? তাও এই অফিসে?
হঠাৎ আমার রুমে এডমিন হাসান সাহেব ঢুকলেন। ঢুকেই একটা সালাম দিলেন। পিছন পিছন আসলেন রফিক। রফিকের হাতে একটা বক্স। বক্সটি প্লাস্টিকের রসি দিয়ে বাঁধা।
‘রফিক, ওটা স্যারের টেবিলে রাখো।’
হাসান সাহেবের কথায় বক্সটি রাখলেন রফিক সাহেব।
আমি অতি আগ্রহ নিয়ে বক্সটি দেখছি। এমন ভাব নিলাম যেন কিছুই জানিনা। বললাম,‘হাসান ভাই এটা কিসের বক্স?’
‘ কেকের।’
‘ কেক কেন?’
‘ও মা! এটা কেমন প্রশ্ন! ঘন্টা খানেক আগে তো আপনি কন্ট্রিবিউট করলেন। ভুলে গেলেন! আজকে ১২ মে রণজিৎের জন্মদিন না?’
রণজিৎের মুখে একটু হাসির ঝিলিক দেখা গেল।
বললাম,‘ ও তাইতো। শুভ জন্মদিন রণজিৎ।’
রণজিৎ দাদা একটু হাসি হাসি মুখে বললেন,‘ধন্যবাদ ভাই।’
‘রফিক বক্সটা খোলো তো।’ রফিককে উদ্দেশ্য করে অর্ডার করলেন হাসান। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,‘কেকটা দেখেন ভাই কেমন হয়েছে।’
রফিক কেকের বক্স খোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। রণজিৎের চোখ জ¦ল জ¦ল করে উঠল। কেকটা দেখার আগ্রহ যে তার ভীষণ তা মুখে না বললেও চোখে বোঝা যাচ্ছে। সে হয়তো মনে মনে বলছে, মোশারফ ভাইয়ের সাথে সাথে আমিও একটু দেখে নেই।
আমি বললাম,‘ কী দরকার। থাক না। কাটার সময় দেখা যাবে।’
‘ আরে দেখেন, কেমন হলো।’ বললেন হাসান।
রফিক ততক্ষণে কেকের বক্স খুলে কেক দৃশ্যমান করে তুলেছে। কেকটা দেখেই মুড অফ করে ফেলল রণজিৎ। গোমড়া মুখ করে থাকল বেশ কিছুক্ষণ। এরপর একটু বড় গলায় বলল,‘ না ভাই, এই কেক আমি কাটব না। কাটব না। কাটব না।’ বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হাত টেনে ধরল হাসান।
ঘটনা কী? জানার জন্য কেকের দিকে তাকালাম গুরত্ব দিয়ে। দেখে হাসি চলে এলো মুখে। কিন্তু সেই হাসি জিহ্বায় কামড় দিয়ে থামিয়ে দিলাম। জিহ্বায় কামড় দেয়া অবস্থায় কেকের লেখাটা পড়লাম দুই তিনবার। কেকের উপরে লেখা,‘ব্যাচেলর জীবনের ইতি টানুন।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

জনপ্রিয়

Recent Comments

মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী on আমার শুধু ঘুমিয়ে পড়া বাকি
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী on আকাশের কল্পনা
Sazzad Mohammad on বুবলি 
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী on বুবলি