লিখেছেন- শামীম হাসনাইন
এক কৃষকের একটি সুন্দর গাজর বাগান ছিল। বাগানে ছিল সারি সারি মিষ্টি ও রসালো গাজর। এমন গাজর আশপাশের আর কোনো বাগানে ছিল না। সেই বাগানের কাছেই একটি চটপটে ছোট্ট খরগোশ বাস করত।
ছোট্ট খরগোশ গাজর বাগানের চারপাশে ঘোরাঘুরি করত। আর সুযোগ পেলেই গাজর তুলে চিবুতে থাকত।
একদিন বিকেলে ছোট্ট খরগোশ গাজর বাগানে ঢুকলো। তখন একটি ছায়া তাকে অতিক্রম করে গেলো। সে উপরের দিকে তাকালো। দেখল একটি শিকারি ইগল শূন্যে চক্কর দিচ্ছে। ইগলের তীক্ষè চোখ খাবারের সন্ধান করছে।
ছোট্ট খরগোশ অনুমান করলো, ইগল হয়তো তাকেই নিশানা করে নেমে আসবে। তাই বাগান থেকে দ্রæত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া উচিত। ছোট্ট খরগোশ যেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। কিন্তু অমনি শিকারি ইগল বিদ্যুৎ গতিতে নিচে নেমে গেলো। আর খরগোশকে দুপায়ে আঁকড়ে ধরল।
খরগোশ আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। ইগল মাটি থেকে অনেক উপরে উঠে যেতে লাগল। ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগল খরগোশের গায়ে। সে ভয়ে আরও জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল। আর তাকে ছেড়ে দিতে কাকুতি মিনতি করতে লাগল।
একটি ছোটো মেয়ে মাঠের পাশে খেলছিল। মেয়েটির নাম ফাবিহা। সে ছোট্ট খরগোশের চিৎকার শুনতে পেলো। সে এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল। দৌড়ে বাগানের সামনে চলে গেলো। কিন্তু ছোট্ট খরগোশকে সেখানে দেখতে পেলো না। তখন উপরের দিকে খরগোশের চিৎকার শুনতে পেলো। উপরে তাকিয়ে দেখলÑখরগোশকে ইগল দুপায়ে আঁকড়ে ধরে উড়ে যাচ্ছে।
ছোট্ট খরগোশকে ফাবিহা অনেক পছন্দ করত। খরগোশকে দেখতে সে প্রায়ই গাজর বাগানে চলে যেত। খরগোশের সাথে খেলা করত। পছন্দের খাবার খেতে দিত। ফাবিহা খরগোশকে ঝুলতে দেখে ভীষণ কষ্ট পেলো। খরগোশকে বাঁচাতে একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। হঠাৎ তার কাঠের গুলতিটার কথা মনে পড়ল।
ফাবিহা দৌড়ে উঠান থেকে কাঠের গুলতি নিয়ে এলো। কয়েকটা নুড়ি পাথরও কুড়িয়ে নিয়ে এলো। তারপর গুলতিতে নুড়ি ধরে ইগলকে নিশানা করে ছুড়ে মারল। কিন্তু ইগলের গায়ে সেটা লাগল না। তারপর ধীরস্থিরভাবে আবার নিশানা করলো। গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়ে মারল গায়ের সব শক্তি দিয়ে। এবার আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো না। বাতাসে ভেসে নুড়ি পাথর গিয়ে লাগল ইগলের ডানায়।
পাথরের নুড়ির আঘাতে ইগল চমকে উঠল। তার ডানায় বেশ জোরেই লাগল নুড়িপাথর। কিছু পালক নুড়ির আঘাতে খুলে বাতাসে ভাসতে লাগল। ভয় পেয়ে গেলো ইগল। ব্যথাও পেলো তার ডানায়। সেই আঘাতের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরও একটা নুড়ি এসে লাগলো ইগলের বুকে। এবার আর ইগল ভারসাম্য রাখতে পারল না। পড়ে যেতে লাগল নিচের দিকে। তাই খরগোশকে ছেড়ে দিয়ে ডানা ঝাপটে উড়তে লাগলো।
খরগোশ বাতাসে ডিগবাজি খেতে খেতে নিচে নামতে লাগল। ফাবিহা দৌড়ে গিয়ে দুহাত বাড়িয়ে খরগোশকে ধরে ফেলল। প্রাণভয়ে ইগল গ্রামের সীমানা ছেড়ে দূরে পালিয়ে গেলো।
ফাবিহা খরগোশকে বুকে জড়িয়ে ধরল। খরগোশ ভয়ে কাঁপছিল। কিছুটা ধাতস্থ হতেই সে বললÑ ধন্যবাদ, ফাবিহা। তুমি আমাকে শিকারি ইগলের থাবা থেকে বাঁচিয়েছ।
ফাবিহা খরগোশের কথা শুনে মৃদু হাসল। তারপর খরগোশের নরম তুলতুলে শরীরে হাত বুলিয়ে দিলো। এরপর থেকে ছোট্ট খরগোশ সবসময় ফাবিহার কাছাকাছি থাকত। আর হাসি আনন্দে তাদের দিন কাটতে লাগল।